তিনদিনের ঘোরাঘুরি ,হাতের কাছেই লাটাগুড়ি - গরুমারা অভয়অরণ্য - Lataguri - Gorumara- Duars - Jalpaiguri Travel story
তিনদিনের ঘোরাঘুরি ,হাতের কাছেই লাটাগুড়ি - গরুমারা অভয়অরণ্য - Lataguri - Gorumara - Jalpaiguri Travel story
বাঙ্গালি আগাগোড়াই ভ্রমণপিপাসু । তাই ছুটি পেলেই বাঙালি ছোটে দিঘা পুরি । হাতের কাছে আরো একটা মনোরম জায়গা লাটাগুড়ি , যা ছোটো থেকে বৃদ্ধ সবার জন্যই উপযোগী ।এটি একরাত্রির ট্রেন পথে পৌঁছে যাওয়া যায় ,তবে এটা দুটিভাবে যাওয়া যায়।কামরূপ এক্সপ্রেস ধরে মালবাজার স্টেশনে নেমে গাড়ি করে লাটাগুড়ি পৌঁছানো যায় অথবা নিউ মায়নাগুড়ি স্টেশনে নেমে গাড়ি করে খুব সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে লাটাগুড়ি পৌঁছানো যায়।
লাটাগুড়ি হলো গরুমারা ন্যাশনাল পার্কে এর মাঝে অবস্থিত একটা ছোট্ট গ্রাম । লাটাগুড়ি পুরো গ্রামটাই লম্বা গাছের বোন এবং চা বাগানে ভর্তি ।
যেদিকেই তাকাই বিভিন্ন গাছে বিভিন্ন ধরণের পাখি বসে সুমধুর সুরে গান গাইছে । আমার পাখি দেখতে এবং তাদের আওয়াজ শুনতে খুব ভালো লাগে । সব পাখি identify করতে পারিনা কিন্ত রাত হয়ে যাওয়ার পরে হোটেলের রুমে শুয়ে ময়ুর,ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ও অন্যান্য পাখির আওয়াজ শুনতে খুব ভালো লাগে ।
গরুমারা অভয়অরণ্য
তারপর গরুমারা ফরেস্টে হুড খোলা জিপে করে জঙ্গল ভ্রমণ ।আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো বর্ষার সময় গরুমারা ফরেস্ট বন্ধ থাকে 15 জুন থেকে 15 সেপ্টেম্বর অবধি । শীত কাল জঙ্গল ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত , তাই ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি গরুমারা যাওয়া ভালো । জঙ্গল টি মূর্তি নদীর দুপাশে অবস্থিত । গরুমারা এক শৃঙ্গ গন্ডার জন্য বিখ্যাত ,
তাছাড়াও গরুমারা ঢুকতেই চারিপাশে ময়ূর ও অনেক হরিণ দেখলাম ।
তারপরে ধূলোর রাস্তাই ধূলো উড়িয়ে এগিয়ে যেতেই হটাৎ দেখি রাস্তায় একটা চিতাবাঘ এক দিক থেকে অন্য দিকে যাচ্ছে । সবাইকার বাঘ দেখার আনন্দের বহিঃপ্রকাশে বাঘটি ভয় পেয়ে জঙ্গলের ভিতরে চলে গেলো।তাই এই ফোটো টিই তুলতে পেরেছিলাম ,যাতে বাঘের দেখা স্পষ্ট নয় ।
আর কিছু হাতি সামনে ঘুরছিলো।
তারপরে একটা পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়ালাম যেখান থেকে গণ্ডার দেখা যায় মূর্তি নদীর পাশেই । দেখলাম একদল জলহস্তি নদী পেরিয়ে যাচ্ছিলো । আর কয়েকজন বনকর্মী হাতির পিঠে করে পশুদের নুন দিতে বেরিয়েছে । আমাদের গাইড আমাদের বললো জলহস্তিরা এই ছোট্ট ঢিবিটাই আসে নুন খেতে ।
আর Hornbill নামক এই পাখিটাও এই গরুমারার বৈশিষ্ট্য, যাকে বাংলায় বলে ধনেশ ।
তারপর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই সন্ধ্যে হয়ে গেলো । ফিরে যেতে ইচ্ছা করছিলো না কিন্তু হোটেলে ফেরার আগে জিপ আমাদের নিয়ে গেলো একটা মাঠে, সেখানে সাঁওতাল দের নাচ দেখলাম মাদলের তালে আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার তীব্র আওয়াজ ।
তারপর ফিরলাম হোটেলে । সেখানেও চমক বাকি ছিলো। হোটেলের মালিক পরিচিত হওয়ায় আমাদের জন্য তৈরী ছিলো ওখানকার স্পেশাল বরেলী মাছের ঝোল আর দেশি মুরগীর ঝোল ।
পরের দিন ওখান থেকে রওনা দিলাম লাভা । যাওয়ার পথে রাস্তাই দেখলাম সিঁদুরে মাখা মহাকাল ।
এখানে নাকি রাতে হাতিরা এসে সারাদিনের সব প্রসাদ খেয়ে যায়।রাস্তায় যেখানে চা খেতে দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে military training চলছিলো ।
লাভা পৌছালাম বিকেলের দিকে। ওখানে হোটেল পাওয়া যায়না , সবই হোমষ্টে । এরকম এক হোমস্টেতে গিয়ে উঠলাম। জানলার সামনেই দেখতে পেলাম বড়ো মনস্ট্রি । ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো আর ঠান্ডা আরো বেড়ে গেলো।
তাই আর কোথাও যাওয়া হলো না । পরের দিন সকালে গেলাম মনস্ট্রি তে ।
অনেকটাই হাঁটা পথ কিন্তু খুবই স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ । বাচ্ছারা পড়াশোনা করছিলো আর কয়েকজন মনস্ট্রি সাজাচ্ছিল , সামনেই কোনো অনুষ্ঠান ছিলো। ফেরার সময় হাঁটাপথ হলেও কষ্ট হয়নি। তারপর রিশপ ও লোলেগাঁও ঘুরে পৌছালাম ডেলোতে । ডেলোর মূল আকর্ষণ হলো Skydiving , যা আমার করা হয়ে ওঠেনি।
তারপর ওখান থেকে গেলাম ক্যাকটাস মিউজিয়াম, সেখানে বহু ধরণের ক্যাকটাস দেখলাম।
ওখানে কিছুক্ষন ঘুরে তারপর এলাম সেবক । সেখানে একটি বড়ো হোটেল এবং সেখানে ট্যুরিস্ট এর ভীষণ ভীড়। সেখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে আবার ফিরে এলাম আমাদের লাটাগুড়ির হোটেলে । পরের দিন সকালে গাড়ি করে পৌছালাম নিউ মইনাগুড়ি স্টেশনে । তারপর সেখান থেকে একেবারে বাড়ি। মাঝরাতে বাড়ি পৌছালাম। ব্যাস । আমাদের ভ্রমণ শেষ। আবার সেই রোজকার কাজকর্মে দিনযাপন।
Comments
Post a Comment